Saturday, January 14, 2017

বাসকঃ তেলাকুচাঃ কালমেঘঃ অর্জুনঃ অশ্বগন্ধাঃ

Related image

বাসকঃ বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজউদ্ভিদ। আর্দ্র, সমতলভূমিতে এটি বেশী জন্মে। লোকালয়ের কাছেই জন্মে বেশী। হালকা হলুদে রংয়ের ডালপালায়ক্ত ১ থেকে ২ মি. উঁচু গাছ, ঋতুভেদে সর্ব্বদাই প্রায় সবুজ থাকে।

বাসকের প্রয়োগঃ
  • বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ খেলে শিশুর সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।
  • বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ও ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
  • যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা কাশি হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারীরস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
  • প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রনা থাকলে বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ মিছরি ১-২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
  • জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলি লিটার জলে ফোটাতে হবে।
  • ২৫ মিলি লিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুইই চলে যায়।
  • বাসকের কচিপাতা ১০-১২ টি এক টুকরো হলুদ একসঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগলে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
  • বাসকপাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১চামচসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
  • পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০ টি থেঁতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
বাসকের ভেষজ দাওয়াইঃ
  • * শিশুর পেটে কৃমি থাকলে বাসকের ছালের ক্বাথ খাওয়ালে এর উগ্র তিক্ত স্বাদের কারণে কৃমি বের হয়ে যায়।
  • যাদের হাঁপানির টান আছে তারা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে এর সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।
  • যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
  • বাসকপাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রং ফরসা হবে।
  • এক কলসি পানিতে তিন-চারটি বাসকপাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবহার করতে পারেন।
  • পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।
  • বাসক পাতার রস মাথায় লাগালের উকুন চলে যায়।
  • বাসক পাতা বা ফুলের রস এক বা দুই চামচ মধু বা চিনি দিয়ে খেলে জন্ডিস ভালো হয়।
  • শরীরে দাদ থাকলে বাসক পাতার রস লাগালে ভালো হয়ে যায়।

তেলাকুচাঃ

Related image
তেলাকুচা একপ্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে একে কুচিলা’, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। অনেক অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়।
তেলকুচার ঔষধি গুণাগুণঃ
তেলাকুচা ফলে আছে ‘মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক- রোধী’ এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় উপাদান। কবিরাজী ভেষজ চিকিৎসায় তেলাকুচা বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, শোথ (edema), হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস।

কালমেঘঃ

Image result for কালমেঘ পাতার ছবি
কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ১ সে.মি.লম্বা ফুলের রং গোলাপী। দেড় থেকে দুসে.মি. লম্বা ফল অনেকটা চিলগোজার মতন দেখতে। শিকড় ব্যতীত কালমেঘ গাছটির সব অংশই ঔষুধের কাজে লাগে। কালমেঘ অত্যন্ত তেতো এবং পুষ্টিকর।
ব্যবহারঃ
  • মানব দেহের রোগপ্রতিরোধী শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • জ্বর, কৃমি, আমাশয়, সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা এবং বায়ু আধিক্যে কালমেঘ অত্যন্ত উপকারী।
  • শিশুদের যকৃৎ রোগে এবং হজমের সমস্যায় কালমেঘ ফলপ্রদ। কালমেঘের পাতা থেকে তৈরী আলুই পশ্চিম বাংলার ঘরোয়া ঔষুধ যা পেটের অসুখে শিশুদের দেওয়া হয়।
  • টাইফয়েড রোগে এবং জীবানুরোধে কালমেঘ কার্য্করী।
  • কোথাও কোথাও কালমেঘ গাছ বেটে সরষের তেলে চুবিয়ে নিয়ে চুলকানিতে লাগানো হয়।
  • গাছের পাতার রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও লিভার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
  • কালমেঘ গাছের পাতার রস জ্বর, কৃমি, অজীর্ণ, লিভার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা শিশুদের বদহজম ও লিভারের সমস্যায় প্রাচীনকাল থেকে এটি ব্যবহার করছে।
  • এ গাছের রস রক্ত পরিষ্কারক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক ও রেচক হিসেবেও কাজ করে।
  • এ গাছের পাতা সিদ্ধ করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে ঘা-পাঁচড়া জাতীয় রোগ দূর হয় বলে আদিবাসীদের বিশ্বাস।

অর্জুনঃ

Related image
ঔষধি গুনঃ 
ভেষজ শাত্রে ঔষধি গাছ হিসাবে অর্জুনের ব্যবহার অগনিত।বলা হয়ে থাকে, বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর এক জন ডাক্তার থাকা একই কথা। এর ঔষধি গুন মানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই।
অর্জুন এর ব্যবহারঃ 
  • যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রাক্তচাপ নাই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মি লি জল এর সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে বিকেলবেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে যায়।তবে পেটে যাতে বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • অর্জুন ছাল বেটে খেলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয়, হৃৎপিন্ডের ক্ষমতা বাড়ে।এটি রক্তের কোলেষ্টরল কমায় এবং ফলত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।
  • বিচুর্ণ ফল মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভারসিরোসিসের টনিক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।
  • অর্জুনের ছালে ট্যানিন রয়েছে, এ টানিন মুখ,জিহ্বা ও মাড়ীর প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যাবহার হয়।এটি মাঢ়ীঢ় রক্তপাত বন্ধ করে এবং শরীরে ক্ষত, খোস পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে সেরে যায়। অর্জুনের ছাল হাঁপানি, আমাশয়, ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা, ব্যথ্যা ,প্রদর ইত্যাদি চিকিৎসায়ও উপকারী।
  • এটি সংকোচ ও জ্বর নিবারক হিসাবেও কাজ করে।
  • এ ছাড়া অর্জুনে saponin রয়েছে, একটি যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়।তাই চর্ম ও যৌন রোগে অর্জুন ব্যাবহ্রত হয়।যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও অর্জুনের ছালের রস ব্যাবহার হয়।
  • অর্জুনের ছালে essential oil রয়েছে তাই অর্জুন খাদ্যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যাতন্ত্রের ক্রিয়া স্বভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  • ক্যান্সার কোষের বর্ধন রোধকারী gallic acid, ethy gallae ও lutenolin রয়েছে অর্জুন ছালে। এ কারনে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যাহারের সুযোগ রয়েছে।

অশ্বগন্ধাঃ

অশ্বগন্ধা আমাদের দেশের ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। গাছের গন্ধ ঘোড়া বা অশ্ব এর মত বলেই সংস্কৃতে একে অশ্বগন্ধা বলে। বাংলায় ও আমরা অশ্বগন্ধা-ই বলে থাকি। শক্তিবর্ধক হিসেবে এবং এ্যাফ্রোডেসিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই ইংরেজিতে একে Indian Ginseng বলে। Solanaceae ফ্যামিলির গাছ অশ্বগন্ধার বৈঙ্গানিক নাম Withania somnifera (L.) Dunal. Withanine নামক রাসায়নিক উপাদান এই গাছ থেকে আলাদা করার কারণে এই গাছের নামে Withania নামকরণ করা হয়েছে। আর somnifera এসেছে somnifer থেকে যার মানে নিদ্রা আনয়নকারী। মূল এবং পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়। এ গাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় পাওয়া যায়। নিদ্রা আনয়নকারী ঔষধ হিসেবে প্রচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে এর ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
সূত্রঃ http://rupshaj.com/health/2363/

No comments:

Post a Comment