Wednesday, December 28, 2016

কিছু শাক সবজির পুষ্টিগুন

Related image
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শীতকালীন শাক সবজির মধ্যে অন্যতম পুষ্টিকর সবজি গাজর। গাজরের প্রায় ১০০টি ভিন্ন ধরনের প্রজাতি রয়েছে। গাজরে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। যেমন- থায়ামিন,
নিয়াসিন, ভিটামিন বি৬, ফলেইট এবং ম্যাংগানিজ যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক জরুরী। এছাড়াও গাজরে আরও আছে ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ও পটাশিয়াম। অর্থাৎ আমাদের দেহকে সুস্থ সবল রাখতে যে সব ভিটামিন ও খনিজ উপাদান প্রয়োজন তার সবই আছে গাজরে। গাজরকে বলা হয় সর্বগুণে গুণান্বিত সবজি। আসুন দেখে নিই গাজরের এত সব উপকারিতার মধ্যে প্রথম ৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতার একটি তালিকা।
চোখের সুরক্ষায় গাজর
গাজর ভিটামিন এ তে সমৃদ্ধ। ভিটামিন এ চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়াও গাজরের বিটা ক্যারোটিন লিভারে ভিটামিন এ তে পরিনত হয় যা সরাসরি রেটিনাতে পৌছায়। তারপর এই ভিটামিন এ রেটিনা থেকে রডোপ্সিনে এ যায়। রডোপ্সিনে একটি হালকা বেগুনি রঙের পিগমেনট যা রাতেরবেলার দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। সুতরাং গাজর রাতকানা রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে।
লিভার সুস্থ রাখে
গাজর একটি ডেটক্স খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ডেটক্স খাদ্য সমূহ লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গাজর লিভারকে পরিস্কার করে। লিভারঘটিত সকল ধরনের রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজর লিভারে জমে থাকা মেদ দূর করতে সব থেকে কার্যকরী একটি ওষুধ।
দাঁতের সুরক্ষায় গাজর
দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় গাজরের গুরুত্ব অনেক বেশি। গাজর খেলে দাঁত পরিষ্কার হয়। দাঁতে জমে থাকা প্লাক দূর হয়। ডাক্তাররা বলেন গাজর খাওয়ার সময় আমাদের মুখে ‘সিলভা’ নামক একটি যৌগের নিঃসরণ ঘটে। সিলভা মুখে অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে যা দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। প্রতিদিন একটি করে গাজর খেলে মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা দূর করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
গবেষকরা আবিষ্কার করেন গাজর ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ফ্যালকারিওনল ও ফ্যালকারিনডিওল দুটি ক্যান্সার প্রতিরোধী যৌগ, যারা দেহে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি করতে বাধা প্রদান করে। গাজরে এই দুটি যৌগ প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদন হয়। গাজর খেলে দেহ ভেতর ত্থেকে নিজেকে ক্যান্সার বিরোধী করে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। এছাড়াও গাজর চামড়ার ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে। গবেষকদের মতে যারা নিয়মিত গাজর খান তাদের প্রায় ৭০% মানুষ চামড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান।
চেহারার বয়সের ছাপ দূর করে
গাজরে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন ত্বকের ক্ষতি পূরণ করতে সাহায্য করে। বিটা ক্যারোটিন খুব ভালো একটি অ্যান্টি এইজিং এর উপাদান যা মুখের বয়সজনিত দাগ ও রিঙ্কেল দূর করে। গাজর খেলে মুখে বয়সের ছাপ ধীরগতিতে আসে। গবেষকরা বলেন সপ্তাহে ৬টি গাজর চেহারার বয়সের ছাপ দূর করে ।
এ ছাড়া গাজরের অন্য গুণগুলোও জেনে নেওয়া যাক।
  • শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় দ্রুত। গাজর খেলে ত্বকে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
  • চুল পড়া রোধে গাজরে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল কার্যকর। গাজর চুল পড়া কমায়, চুলকে শক্ত ও মজবুত করে।
  • গাজরের থাকা বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন ‘এ’-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে এই সবজি। তাই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
  • এই সবজির আলফা ক্যারোটিনসহ আরও কিছু উপাদান হৃদ্রোগ ও হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • গাজরের উপকারী উপাদানগুলো ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অংশ নেয়। এ ছাড়া শ্বাসনালির প্রদাহ ভালো করে।
  • গাজর দাঁতের সুরক্ষা দেয়। দাঁত পরিষ্কারক হিসেবে যেমন কাজ করে, তেমনি দাঁতের গোড়ায় ক্যালকুলাস জমতেও বাধা দেয়।
  • গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য গাজর খুব ভালো সবজি। গাজরের রসে শিশুর জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি কমে।
  • যাঁরা দীর্ঘদিন পেটের সমস্যায় ভুগছেন, এবার গাজরে সমাধান খুঁজতে পারেন, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করারও ভালো ওষুধ।
  • এটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। শরীরের যেকোনো ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে ফেলে সবজিটি। এ ছাড়া যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়ে।
  • এটি কৃমিনাশক হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত গাজর খেলে পেটে কৃমি হওয়ার শঙ্কা কমবে।
  • গাজরে ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। এ উপাদানটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • গাজর খেলে পেট ভরবে ঠিকই, আবার বেশি ক্যালরিও যোগ হবে না শরীরে। তাই ওজন কমাতে বেশি বেশি গাজর খেতে পারেন

স্বাদের ঝিঙার অনন্য সব স্বাস্থ্যগুণ 
 
বাজারে এখন ঝিঙা পাওয়া যাচ্ছে, চলছে ভরা মৌসুম। ঝিঙা ভাজি হোক কিংবা ঝোল, অথবা হোক মাছের সাথে রান্না, সব ভাবেই বাঙালির রসনা বিলাসে ঝিঙার অবস্থান বহু পুরনো। তবে কেবলই কি স্বাদের জন্য এই কদর? একদম নয়। কদর আছে খুব এর গুণেরও। সাদামাটা এই সবজিটি বাস্তবে হরেক গুণের আধার।
ঝিঙার ইংরেজি নাম Ridge Gourd আর ভেষজ নাম Luffa acutangula । ফাইবার সমৃদ্ধ গাঢ় সবুজ রঙের এই সবজিটির রয়েছে দারুন পুষ্টিমান। এতে আছে ভিটামিন সি, রিবোফ্ল্যাভিন, জিংক, আয়রন, থায়ামিন, ম্যাগনেসিয়াম। আসুন জেনে নেই ঝিঙা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কী উপকারে আসে—

১। চমৎকার রক্ত সংশোধক:
রক্তকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে ঝিঙা অতুলনীয়। যকৃতের জন্য খুবি উপকারি এই সবজি আপনার স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দিতে অনন্য খাদ্য উপাদান। এ্যালকোহলের প্রভাব বিনষ্টকরণেও ঝিঙা খুবই উপকারী।
২। জন্ডিস থেকে আরোগ্য দাতা:
জন্ডিস নিরাময়ে ঝিঙা খুব ব্যবহার হয়ে থাকে। ঝিঙার জুস জন্ডিস আক্রান্ত রোগীদের খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৩। পেটের সমস্যায় কার্যকরী:
এ্যাসিডিটি রোধ করে আলসার থেকে রক্ষা করতে সক্ষম এই ঝিঙা। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, এমনকি পাইলস রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ঝিঙা। পাকস্থলীর কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি করে এটি।
৪। ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী:
ঝিঙায় বিদ্যমান peptides রক্ত ও প্রস্রাবের চিনির পরিমান কমাতে সাহায্য করে। আর এটি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝিঙা খুবি উপকারী।
৫। ওজন নিয়ন্ত্রণের মহৌষধ:
প্রথমতো ঝিঙায় কোন পরিপৃক্ত চর্বি নেই, দ্বিতীয়তো এটি শরীরের কলোস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, তৃতীয়তো এটি কম ক্যালোরি ধারণ করে, চতুর্থতো এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান পানি। এছাড়াও এটি বার বার খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা কমিয়ে দেয়। এতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল; এগুলো ওজন কমাতে কাজ করে। ফলে ঝিঙাকে ওজন কমানোর মহৌষধ বলা চলে।
৬। প্রদাহ রোধক ও এ্যান্টিবায়োটিক:
প্রদাহ রোধক ও এ্যান্টিবায়োটিকের চমৎকার গুণ ঝিঙাতে রয়েছে। শরীরের বিষাক্ত যৌগের নির্মূলে এই প্রাকৃতিক উপাদান খুব কার্যকর। ত্বকের সুরক্ষায়ও ঝিঙার চমৎকার ব্যবহার রয়েছে।
৭। প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি করে:
ঝিঙায় বিদ্যমান পুষ্টি শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে বিভিন্ন রোগজীবাণু, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।

উপকারী ঝিঙার স্বাদও অতুলনীয়। এটা যেমন ভাজি করে খাওয়া যায় তেমনি খাওয়া যায় ভর্তা করেও। ছোটমাছের সাথে পেঁয়াজ কাঁচামরিচে অসাধারণ তরকারি হয় ঝিঙার। আর বড় মাছের ঝোল রান্নায়ও এর স্বাদ অসাধারণ। সুস্বাস্থ্যের জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় থাকুক তাজা ঝিঙা।

সজনে ডাঁটার ৬ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা!!
 
সজনে ডাটা মূলত গরমের সবজি। সজনে ডাটা দিয়ে রান্না করা মজাদার তরকারি
এই গরমে আমাদের রসনায় তৃপ্ত করে, কিন্তু এর বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। আসুন সজনে ডাটার উপকারিতা জেনে নেয়া যাক-

উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণেঃ
সজনে ডাঁটা খাওয়া উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সজনে দেহের কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া উচ্চ রক্ত চাপের চিকিৎসায় সজনের পাতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সজনের পাতার (কচিনয়) রস প্রতিদিন নিয়ম করে ৪-৬ চা চামচ খেলে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

টিউমার বা আঘাত জনিত ফোলা উপশমেঃ
টিউমার যখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তখন সজনের পাতা এই টিউমার নিরাময় করতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমার ধরা পরলে তাতে সজনে পাতা বেটে প্রলেপের মতো ব্যবহার করলে টিউমারের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্যথা বা আঘাত পেলে দেহের কোনো অংশ ফুলে উঠলে একই উপায়ে তা নিরাময় করা সম্ভব।

বাতের ব্যথা উপশমেঃ
বাতের ব্যথা উপশমে সজনে গাছের ছাল বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতি বেশ প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে গাছের ছাল তুলে তা বেটে রস চিপে নিয়ে এই রস নিয়মিত প্রতিদিন ৪-৬ চা চামচ খেলে বাতের ব্যথা প্রায় ৬৫% উপশম হয়।

দাঁতের মাড়ির সুরক্ষায়ঃ
অনেক সময় দাঁতের মাড়ির সমসসায় ভুগে থাকেন অনেকে। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া সমস্যায় ইদানীং অনেককে পড়তে দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে সজনে পাতা। সজনে পাতা ১/২ মগ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি দিয়ে ভালও করে প্রতিদিন কুলকুচা করতে হবে। এতে মাড়ির সকল সমস্যার সমাধান হয়।

হেঁচকি ওঠা উপশমেঃ
হেঁচকি ওঠা যে কতো কষ্টের তা যারা ভুক্তভোগী তারা ঠিকই জানেন। একবার হেঁচকি উঠা শুরু করলে তা বন্ধ হতে চায় না সহজে। কিন্তু সজনে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে বেশ সহজে। সজনে পাতার রস ৯/১০ ফোঁটা আধ গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে পান করে ফেলুন এক নিঃশ্বাসে। দেখবেন হেঁচকি ওঠা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।

পেটের সমস্যা সমাধানেঃ
বহুকাল আগে থেকে সজনে হজমের সহায়ক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেটে গ্যাস হলে, বদহজম হলে এবং পেটে ব্যথা হলে সজনের তৈরি তরকারীর ঝোল খেয়ে নিন। দেখবেন পেটের গোলমাল অনেক উপশম হয়ে গিয়েছে।

ফুলকপিতে আছে গরুর দুধের চেয়ে ৫ গুণ ক্যালসিয়াম ২০০ গুণ আয়রন

ফুলকপি পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি।
এর পাতার উপরিভাগে ক্যানসার নিরোধক উপাদান পেয়েছেন বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। বাল্টিমোর জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা ফুলকপির পাতায় আইসো থায়োসায়ানেটস নামক রাসায়নিক পদার্থ পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, মলাশয় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমাতে হলে সপ্তাহে প্রায় দুই পাউন্ড ফুলকপি এবং এ জাতীয় শাকসবজি খেতে হবে। বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, ফুলকপির কচি পাতা সপ্তাহে এক আউন্সের কিছু বেশি খেলে তার দেহে ক্যানসারের ঝুঁকি অর্ধেক কমতে পারে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ফুলকপির কচি পাতা থেকে সংগৃহীত আইসো থায়োসায়ানেটস নির্যাস প্রয়োগে ওদের বুকের টিউমারের আকার ও সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যা ক্যানসারে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ছিল।
ফুলকপির পাতায় প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ ক্যালসিয়াম, খাদ্যশক্তি ও আয়রন আছে।
এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কালো কচুশাকের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ, সবুজ কচুশাকের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ, লালশাকের চেয়ে দ্বিগুণ, কলমিশাকের চেয়ে ৬ গুণ, পুঁই ও পাটশাকের চেয়ে ৭ গুণ, পালং ও ডাঁটা শাকের চেয়ে ৮ গুণ, মুলাশাকের চেয়ে ২৫ গুণ ও গরুর দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি আছে।

ফুলকপির কচি পাতায় প্রায় সব খাদ্যের চেয়ে অনেক বেশি আয়রন আছে। যেমন-সবুজ কচুশাকের চেয়ে ৪ গুণ, ডাঁটা শাকের চেয়ে দেড় গুণ, কলমিশাকের চেয়ে ১০ গুণ, মুলাশাকের চেয়ে ১২ গুণ ও পালংশাকের ৫ গুণ বেশি আয়রন আছে। খাদ্যশক্তিও প্রায় সব শাকসবজির চেয়ে অনেক বেশি আছে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ আছে। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপির পাতায় ক্যালসিয়াম ৬২৬ মিলিগ্রাম ও আয়রন ৪০ মিলিগ্রাম থাকে। ফুলকপিতে আয়রনের পরিমাণ আলু, মুলা, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গার চেয়ে বেশি। তবে এই পুষ্টিমান ফুলকপির জাত ও উত্পাদনের স্থানের ওপর নির্ভরশীল।

শিম
শীতকালের একটি জনপ্রিয় সবজি শিম। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই চাষ হয় শিমের। শিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন আর মিনারেল আছে। যাঁরা সরাসরি প্রোটিন খান না অর্থাৎ মাছ, মাংস খাওয়া হয় না, তাঁদের জন্য শিমের বিচি শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। যাঁদের আমিষ খাওয়ায় সীমাবদ্ধতা আছে, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আর এই শীতে নিয়মিত শিম খেলে ত্বকও ভালো থাকবে।

শিমের পুষ্টি উপাদানঃ
আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কচি শুঁটিতে পানি ৮৫ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩ গ্রাম, শর্করা ৬.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৭ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৪ গ্রাম, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ২১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৭ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৮৭ মাইক্রো মিলিগ্রাম এবং আঁশজাতীয় উপাদান বিদ্যমান। পরিপক্ব শুঁটিতে পানি কম থাকে এবং কিছু উপাদান বেশি থাকে। যেমন শ্বেতসার ৬০ গ্রাম, আমিষ ২৫ গ্রাম, স্নেহ ০.৮০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম, তাপশক্তি ৩৪০ কিলোক্যালরি।

শিমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

* শিমে পাচক আঁশ (ডায়েটরি ফাইবার) থাকায় খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়।
* রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা প্রকারান্তরে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
* পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়, শরীরের ভেতরের গরম ভাব দূর করে।
* এক গবেষণা থেকে জানা যায়, শিমের পুষ্টিগুণ শুধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় না, রোগকে শরীর থেকে দূরে রাখে।
* লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে।
* মাছসহ বিভিন্ন খাবারের ফুড পয়জনিং প্রতিরোধী অ্যান্টিডোট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
* শিমের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ ও শিমের মধ্যে থাকা খনিজ চুল পড়া রোধে সহায়তা করে এবং চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
* শিমে রয়েছে সিলিকন জাতীয় উপাদান, যা হাড়কে মজবুত করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলেট। এ উপাদান গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ উপকারি।
* শীতে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক আর প্রাণহীন। নিয়মিত শিম খেলে ত্বক ভালো থাকবে এবং ত্বকের রোগবালাইও দূরে থাকবে।
* শিম কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর।
* শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
* শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। শিমগাছ শিকড়ের সাহায্যে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে মাটিকে উর্বর করে

সতর্কতাঃ
শিমে সামান্য পরিমাণে ক্ষতিকর সায়ানোজেনিক গ্লুকোসাইড আছে। কাজেই শিম পরিমাণে খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। শুকনো শিমে এই উপাদানের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই শিমের শুকনো বিচি রান্না করার সময় অবশ্যই একবার পানি পরিবর্তন করা উচিত। শিম খেলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হতে পারে।
টমেটো

টমেটো একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। সবজি হিসেবে টমেটোর জুড়ি অনেক। টমেটো আমাদের দেশে সারা বছর পাওয়া যায়। এটি যেমন কাঁচা খাওয়া যায়, ঠিক একইভাবে রান্না করে বা রান্না সুস্বাদু করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সালাদে বা মুড়ি মাখানোর সময় টমেটো অতুলনীয়। টমেটো সসের তো কথাই নেই। শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে টমেটোর ভূমিকার কথা নতুন নয়। সর্বাধিক উপকার পেতে টমেটো কাঁচা খাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আর দামটাও অনেকটাই নাগালের মধ্যে।

খাদ্য উপাদানঃ
টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, ফলিক এসিড লাইকোপিন, ক্রোমিয়াম ও আরও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনসমূহ।

উপকারিতাঃ
-হার্টের জন্যও ভালো টমেটো। কোলেস্টেরলের মাত্রা ও রক্তচাপ কমাতে সহায়ক এটি। তাই নিয়মিত টমেটো খেলে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে আসবে।
-ডায়াবেটিসের জন্য টমেটো বেশ উপকারী। এ সবজি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
-টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন এ যা দৃষ্টিশক্তিকে আরও উন্নত করে।
-অর্জুন গাছের রসের সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে জেলি করে প্রতিদিন খেলে হার্ট ও বুকের ব্যথা কমে যায়।
-টমেটোতে বিদ্যমান ভিটামিন-কে মজবুত হাড় গঠনে সহায়তা করে।
-ধূমপান ছাড়তে সহায়ক ভূমিকা পালনের সঙ্গে সঙ্গে ধূমপানের কারণে শরীরে সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও কার্যকরী এ সবজি।
-টমেটো শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে করে।
-চুল ও দাঁতের জন্য উপকারী এ সবজি।
-কিডনিকে সুস্থ-সবল রাখতে ভূমিকা পালন করে টমেটো।
-ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী টমেটো। সৌন্দর্য সচেতন নারীরা অনেক সময় টমেটোকে ব্যবহার করেন দামী প্রসাধনীর বিকল্প হিসেবে।
-মাথার খুশকি দূর করতে টমেটোর রসের সঙ্গে ১.৪ ভাগ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
-বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে পাকস্থলী, কোলোরেক্টাল ও প্রোস্টেট ক্যান্সার অন্যতম।
- শারীরিক পরিশ্রমের পর টমেটোর রস যেকোনো কোমল পানীয়ের চেয়ে বেশি উপকারী। গবেষকরা বলেন, ব্যায়াম বা অন্য যেকোনো শারীরিক পরিশ্রমের পর টমেটোর রস পেশি পুনরুদ্ধারে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
-টমেটো ন্যাচারাল এ্যান্টিসেপ্টিক। তাই ইনফেকশন রোধ করে।

বাধাকপি
 
বাধাকপি মূলত বাংলাদেশের একটি শীতকালীন সবজি, যা পাতাকপি নামে বেশি প্রচলিত। এদেশে সবুজ বর্ণের বাধাকপি হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য দেশে লাল বর্ণেরও বাধাকপি পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও বর্তমানে লাল বর্ণের বাধাকপি এখন সুলভ।

পুষ্টিগুনঃ
* বাধাকপিতে রয়েছে lupeol, diindolylmethane এবং sinigrin নামক ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান। তাই বাধাকপি সেবন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বৃদ্ধি রোধ করে।
* বাধাকপি বুক জ্বালা-পোড়া, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দূর করে।
* কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে ও এ সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য বাধাকপি আরেকটি অপরিহার্য সবজি। যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন, চিকিৎসকরা তাদের কাঁচা বাধাকপি সুন্দর করে কেটে কাঁচা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
* বাধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন C রয়েছে যা দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
* বাধাকপির রস খেলে ঘা/ফোঁড়া সেরে যায়৷
* বাধাকপির পাতা কাচা যদি আপনি রোজ 50 গ্রাম করে খেতে পারেন তাহলে আপনার পায়রিয়া এবং দাঁতের অন্য কোন সমস্যা থাকবে না৷
* বাধাকপিতে আছে উচ্চ আঁশ জাতীয় উপাদান যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
* আলসার বা পেপটিক আলসার রোগীদের জন্য বাধাকপি উত্তম দাওয়াই। বাধাকপির রস নিয়মিত পান করা গেলে তা পেপটিক আলসার রোগীদের উপশম দান করে।
* বাধাকপি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি যা চোখের সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী।
* বহুস্তরবিশিষ্ট এ সবজিটি ফাইটোকেমিক্যালসের অন্যতম উৎস, যা শরীর ও ত্বকের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। উজ্জ্বল এবং সুন্দর ত্বকের জন্য বাধাকপি বরাবরই অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি সবজি।
* বাধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন আছে যা চুল পরা সমস্যা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
* বাধাকপির সুপ শুধুমাত্র আপনার শরীরের ওজনই কমায় না, শরীরের পূর্বের আকার ফিরে পেতে সাহায্য করে । বাধাকপি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে গ্লুটাথায়ন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা আপনার লিভারকে কর্মক্ষম রাখাতে সাহায্য করে ।
* এক গ্লাস দই এর ঘোলের মধ্যে এক কাপ বাধাকপির রস, এক চতুর্থাংশ পালং শাকের রস মিশিয়ে প্রতিদিন দু বার পান করলে খুব অল্প দিনের মধ্যে আপনার কোলাইটিস সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়ে যাবে৷

পালং শাক (Spinacia oleracea)
এমারান্থাসি পরিবারভুক্ত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি জনপ্রিয় শাক ও সবজি। এর আদিবাস মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। এটি একবর্ষজীবি উদ্ভিদ, তবে দ্বিবর্ষজীবি পালং গাছ হতে পারে যদিও বিরল। পালং গাছ ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। বাংলাদেশে শীতকালে এর চাষ হয়। এর পাতা একান্তর, সরল, ডিম্বাকার বা ত্রিভূজাকার। এই পাতার আকার ২-৩০ সেমি লম্বা ও ১-১৫ সেমি চওড়া হতে পারে। গাছের গোড়ার দিকের পাতাগুলো বড় বড় এবং উপরের দিকের পাতাগুলো ছোট হয়। এর ফুল হলদেটে সাদা, ৩-৪ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট হয়। এর ফল ছোট, শক্ত, দানাকৃতির ও গুচ্ছাকার। ফলের আকার আড়াআড়ি ৫-১০ মিমি; এতে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে।
পালং শাকের বর্ণনার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে চীনে। সেখানে বলা হয়েছে, এই শাক নেপাল থেকে চীনে এসেছে (সম্ভবতঃ ৬৪৭ খৃঃ)

বয়সের ছাপ লুকানোর জন্য আমরা কতকিছুই না করি। মুখে দামি ক্রিম মাখা থেকে শুরু করে শাক-সবজির ন্যাচারাল ট্রিটমেন্টও নিচ্ছে অনেকে। অথচ শীতের সবজি পালং শাকেই আছে এন্টি-অক্সিডেন্ট। আর এন্টি-অক্সিডেন্টের কাজই হলো কোষের ক্ষয়রোধ করে শরীরকে তারুণ্যদীপ্ত এবং সুস্থ-সবল রাখা। অর্থাৎ বার্ধক্যকে জয় করতে পালং শাকের রয়েছে অনন্য ভূমিকা।

এছাড়া সহজলভ্য এ শাকটির রয়েছে অনেক খাদ্যগুণ। ভিটামিন 'ডি' ছাড়া বাকি সব ভিটামিনই এতে রয়েছে। বিশেষ করে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন 'ই' এবং ভিটামিন 'সি'র উৎস পালং শাক। প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, আয়রনসহ বেশকিছু প্রয়োজনীয় মিনারেল রয়েছে এতে।
পালং শাকের এন্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কেও কোষগুলোকেও সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখে। তাই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। তাছাড়া পালং শাকের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। সব মিলিয়ে পালং শাক শীতের এক অসাধারণ সবজি!

মুলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

মুলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মুলা সাধারণত সাদা, লাল ও হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।
পুষ্টিগুণ:
১০০ গ্রাম মুলা থেকে ১৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৬ গ্রাম খাদ্যআঁশ, ২৫ মাইক্রোগ্রাম ফলেট, ১৪.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২৩৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.২৮ মিলিগ্রাম জিংক এবং ১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্যতথ্য:
* মুলার ক্যারোটিনয়েডস চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং ওরাল, পাকস্থলী, বৃহদন্ত, কিডনী এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
*মুলার ফাইটোস্টেরলস হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
* জন্ডিস আক্রান্ত হলে মুলা রক্তের বিলিরুবিনের কমিয়ে তাকে একটি গ্রহনযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসে যা কিনা জন্ডিসের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
* মূলা মানুষের ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে এবং নকম ক্যালরিযুক্ত সবজি হওয়ায় দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
* অর্শের প্রধান কারন হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। প্রচুর আঁশ সমৃদ্ধ সব্জী মূলা খাদ্যের পরিপাক ক্রিয়াকে গতিশীল করে হজমে সহায়তা করে, যা অর্শ রোগের আশংকাকে নির্মুল করে দেয়।
* রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে লিভার এবং পাকস্থলীর সমস্ত দুষন এবং বর্জ্য পরিস্কার করে থাকে।
* মুলা কিডনি রোগসহ মূত্রনালির অন্যান্য রোগে উপকারী।
*শ্বেত রোগের চিকিৎসায় মূলা ফলদায়ক। এন্টি কারসেনোজিনিক উপাদান সমৃদ্ধ মুলার বীজ আদার রস এবং ভিনেগারে ভিজিয়ে আক্রান্ত জায়গায় লাগাতে হবে। অথবা কাঁচা মূলা চিবিয়ে খেলেও কাজ হবে।
* মুলার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে কফ, মাথাব্যথা, অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
* পোকামাকড়ের কামড় থেকে সৃষ্ট ক্ষত নিরাময়ে মুলার রস কার্যকরী।
*জ্বর এবং এর কারনে শরীর ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে অত্যন্ত উপকারী সব্জী মূলা।
* ত্বক পরিচর্যায়ও মুলা ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা মুলার পাতলা টুকরা ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ব্রণ নিরাময় হয়। এছাড়া কাঁচা মুলা ফেস প্যাক এবং ক্লিন্সার হিসেবেও দারুন উপকারী।

সতর্কতা:
যাদের থাইরয়েড গ্রন্থি, বুকজ্বলার সমস্যা আছে তাদের মুলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত

শসার রয়েছে হরেক গুণ
সারা বিশ্বে আবাদ হওয়ার দিক থেকে ৪ নম্বরে রয়েছে যে সবজিটি, সেটি হলো শসা। শসার রয়েছে হরেক গুণ। রূপচর্চা ও মেদ নিয়ন্ত্রণসহ নানা উপযোগিতা আছে এই সহজলভ্য সবজির।

 মধ্যে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা। আসুন, একবার নজর বোলাই:

দেহের পানিশূন্যতা দূর করে-
ধরুন আপনি এমন কোথাও আছেন, যেখানে হাতের কাছে পানি নেই, কিন্তু শসা আছে। বড়সড় একটা শসা চিবিয়ে খেয়ে নিন। পিপাসা মিটে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন চনমনে।কারণ, শসার ৯০ শতাংশই পানি।

দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষক-
কখনো কখনো আপনি শরীরের ভেতর-বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করেন। দেহে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় একটি শসা খেয়ে নিন।এ ছাড়া সূর্যের তাপে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিন। নিশ্চিত ফল পাবেন।

বিষাক্ততা দূর করে-
শসার মধ্যে যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাটার মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খাওয়ায় কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায়।

প্রাত্যহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে-
প্রতিদিন আমাদের দেহে যেসব ভিটামিনের দরকার হয়, তার বেশির ভাগই শসার মধ্যে বিদ্যমান। ভিটামিন এ, বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। সবুজ শাক ও গাজরের সঙ্গে শসা পিষে রস করে খেলে এই তিন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।

ত্বকবান্ধব খনিজের সরবরাহকারী-
শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা হয়।

হজম ও ওজনহ্রাসে সহায়ক-
শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। ফলে যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা স্যুপ ও সালাদে বেশি বেশি শসা ব্যবহার করবেন। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর হয়।

চোখের জ্যোতি বাড়ায়-
সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন।এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে।চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি কাজ করে।

ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে-
শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল—এ তিনটি আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে-
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়, কোলস্টেরল কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

মুখ পরিষ্কার রাখে-
দুর্গন্ধযুক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত মাড়ির চিকিৎসায় শসা দারুণ কাজ করে। গোল করে কাটা এক স্লাইস শসা জিহ্বার ওপরে রেখে সেটি টাকরার সঙ্গে চাপ দিয়ে আধা মিনিট রাখুন। শসার সাইটোকেমিক্যাল এর মধ্যে বিশেষ বিক্রিয়া ঘটিয়ে আপনার মুখের জীবাণু ধ্বংস করবে। সজীব হয়ে উঠবে আপনার নিঃশ্বাস।

চুল ও নখ সতেজ করে-
শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। এ ছাড়া শসার সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

গেঁটেবাত থেকে মুক্তি-
শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি-
ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের মাথা ধরে। শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে নিলে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা থাকবে না।

কিডনি সুস্থ রাখে-
শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে শসা। এতে কিডনি থাকে সুস্থ ও সতেজ।

শসাকে যেমন পুষ্টিকর সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, তেমনি ব্যবহার করা হয় রোগ নিরাময়ে।

পুষ্টি উপাদান
শসা ভিটামিন এবং মিনারেলেস পরিপূর্ণ একটি সবজি। এর ৯৬ শতাংশ পানি। শসা ভিটামিন-কে, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের উত্তম উৎস। এ ছাড়া রিবোফ্লাবিন, প্যান্টোথেনিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সালফার, সিলিকা এবং ভিটামিন বি-৬ আছে বেশি পরিমাণে। শসা থেকে খাদ্য আঁশ পাওয়া যায়। এতে আরো রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, কিউকারবিটাকিন্স, লিগনান্স এবং ফ্লাভনয়েডস।

স্বাস্থ্য তথ্য
* শসার মাল্টি ভিটামিনস ও মাল্টি মিনারেলস প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং ভিটামিন ও মিনারেলসের অভাবজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
* শসার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
*এর ম্যাগনেসিয়াম রক্ত চলাচল সচল করে।
* শসার আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে।
* এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস; লিগনান্স হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানোসহ জরায়ু ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

ঔষধি গুণ
* শসায় প্রচুর পানি থাকে তাই, শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে মনকে প্রশান্ত করে তোলে।
* এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। শরীরের জমানো ক্ষতিকর ও বিষাক্ত উপাদানগুলো অপসারণ করে রক্তকে পরিষ্কার রাখে।
* শসা বুক জ্বলা, পাকস্থলীর এসিডিটি এমনকি গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দিতে পারে।
* প্রতিদিন শসার জুস খেলে অ্যাকজিমা এবং গাউটে উপকার পাওয়া যায়। এটি ডায়াবেটিসও কিছুটা উপশম করে।
* বাত-ব্যথা প্রশমনের জন্য শসা ও গাজর একসঙ্গে জুস বানিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
* শসার জুস কিডনি এবং গলব্লাডারের পাথর অপসারণে সহায়তা করে।
* শসা হাত ও পায়ের নখ ভাঙা প্রতিরোধ করে।
* পাইরিয়ার কারণে দাঁত ও মাড়ির রোগে শসা উপকারী।

বেগুনে আরও রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, শর্করা, চর্বি, আমিষ, আয়রন
নিম্নমাত্রার কলোক্যালরিসম্পন্ন বেগুন রক্তের খারাপ ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল দূর করে। আমাদের রক্তে ফ্রি রেডিকেল নামে একধরনের ক্ষতিকর উপাদানের সৃষ্টি হয়, বেগুন এই ফ্রি রেডিকেলকে ধ্বংস করে দেয়। নাসুনিন নামে একধরনের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে বেগুনে, যা মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমতে বাধা দেয়। ফলে ব্রেইন স্ট্রোক, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত রোগ দূর হয়। মস্তিষ্কের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ও সরবরাহ বৃদ্ধি করে। পরিণামে আমাদের কাজের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
বেগুনে ফ্ল্যাভিনয়েড, কোলিনারজিক এসিড নামে একধরনের এসিড রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশকৃত রোগজীবাণু, টিউমারের জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ-জাতীয় খাদ্য উপাদান, যা বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বেগুনে আরও রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, শর্করা, চর্বি, আমিষ, আয়রন। বেগুনের উদ্ভিজ্জ আমিষ শরীরের হাড়কে করে শক্তিশালী।
যেসব মহিলা নিয়মিত শাকসবজি, বিশেষত বেগুন খান, তাঁদের ঋতুস্রাবের সমস্যা হয় তুলনামূলকভাবে কম। এই মৌসুমে সর্দি, কাশি, কফ দূর করে বেগুন। বাতের ব্যথা, সর্দিজ্বর দূর করতে বেগুন রাখে অগ্রণী ভূমিকা। যাঁরা ক্রমশ মোটা হওয়ার অসুখে ভুগছেন, তাঁরা বেগুন পুড়িয়ে ভর্তা খেলে উপকার পাবেন। লিভার বা যকৃতের অসুখের জন্য ত্বকের হলুদ ভাব দূর করে বেগুন। বেগুনের আরও এটি গুণ হলো মূত্রবর্ধক। কোনো কারণে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে কচি বেগুনের তরকারি প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
সবাই বেগুন সহ্য করতে পারে না। বেগুন খেলে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বেগুন পরিহার করাই শ্রেয়।

লালচে গোলাপি লালশাক
লালচে গোলাপি লালশাক। হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ এই শাক। আমাদের দেশের অতি পরিচিত শাকগুলোর মধ্যে লালশাক তৈরি করে সবচেয়ে বেশি রক্ত। খাবার চিবাতে পারে এমন শিশুদের জন্য লালশাক ভীষণ উপকারী। কারণ, শিশুদের আয়রন, আয়োডিন দরকার হয় প্রচুর পরিমাণে। আর লালশাক আয়রনের উৎকৃষ্ট উৎস। আস্তে আস্তে শিশুর পেটের ও হজমশক্তির অবস্থা বুঝে পরিমাণ বাড়াতে পারেন। বাড়ন্ত শিশু, পূর্ণ বয়স্কদের জন্যও বয়ে আনে সুফল। অ্যানিমিয়া, অর্থাৎ রক্তশূন্যতা, নিম্ন রক্তচাপ মানে লো ব্লাড প্রেশার, দুর্বলতা, ক্রমশ শক্তি কমে যাওয়া, ডায়াবেটিস রোগী, অস্টিও আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় লালশাক পালন করে অপরিহার্য ভূমিকা।

গর্ভবতী অবস্থা থেকে শিশুর জন্ম ও মাতৃদুগ্ধ পান পর্যন্ত লালশাক ভীষণ জরুরি। তবে এখানেও খেয়াল রাখুন, গর্ভবতী বেশির ভাগ মায়ের প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে। তাই দুপুরে শাক খাওয়াই ভালো। কারণ, ইনটেসটাইন, অর্থাৎ খাবার হজমকারী জরুরি নালিবিশিষ্ট অঙ্গ অধিক রাতে কাজ করে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সচল থাকে বেশি। আর রাতে শাক পরিহার করাই ভালো।
মেনোপোজ, মানে মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। মেনোপোজ হওয়া নারীদের হাড় দুর্বল হয়ে আসে। ত্বক ও চুলে আসে বৈরী ভাব। ভঙ্গুর হতে থাকে নখ। শরীরে দেখা যায় আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। লালশাক এ অবস্থায় হতে পারে উপকারী বন্ধু। দেহে রক্ত বাড়াবে আর ত্বক, চুল ও নখের পুষ্টি জোগাবে। পুষ্টিমূল্য বিচারে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জন্য লালশাক উপকারী।

করলা হলো উৎকৃষ্ট খাবার
এ ছাড়া সর্দি, জ্বর, কাশি, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন রোগ এই সময় বেশি দেখা যায়। কারণ, হঠাৎ করে ঠান্ডা থেকে গরম শুরু হয়। তাই আবহাওয়া সহ্য করতে একটু কষ্ট হয় সবার। বসন্তকালের অসুখগুলোর জন্য করলা হলো উৎকৃষ্ট খাবার। চর্বি ও চিনিবিহীন এই সবজি রক্ত পরিষ্কার করে। যেকোনো ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে করে যুদ্ধ। নিয়মিত করলা খেলে যেকোনো মানুষের শরীরে আয়রনের পরিমাণ বাড়ে। করলা ও চিরতার রস কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। ছোট বাচ্চাদের করলা খাওয়ার অভ্যাস করাতে পারলে খুব উপকার হবে। কারণ, ছোটদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এদের কৃমির আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। আর গরম-ঠান্ডাজনিত অন্য সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধেও কাজ করে এ সবজি। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশি—এমন মানুষের রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। ডায়াবেটিক রোগী, অধিক ওজনের মানুষের জন্য করলা অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এটি রক্তে চিনির পরিমাণ কমায়। হেপাটিক এনকেফালোপ্যাথি (লিভারের জটিল রোগ), লিভার সিরোসিস ও জন্ডিসের রোগীদের জন্য করলা উপযুক্ত খাবার। মুখ, নাক ও কানের ছিদ্র দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে অনেক রোগজীবাণু। এই জীবাণুগুলো ধ্বংস করে করলা। ত্বকের পুষ্টি বাড়াতেও কাজ করে। কাঁচা করলায় ভিটামিন বেশি। তাই কাঁচা খাওয়াই ভালো। আমাদের দেশে ভাজি, তরকারি, ভর্তা বা স্যুপ হিসেবেই করলা খাওয়া হয়। যত কম তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা যায়, ততই ভালো।

দৃষ্টিনন্দন কলার মোচা আয়রনে ভরপুর
সবজি বাজারে শোভা পাচ্ছে কলার মোচা। বর্তমান সবজিগুলোর মধ্যে দৃষ্টিনন্দন কলার মোচা আয়রনে ভরপুর। আয়রন দেহে রক্ত বাড়ায়। রক্তের মূল উপাদান হিমোগ্লোবিনকে করে শক্তিশালী। ত্বক, চুল ভালো রাখতে এই সবজির আয়রন রাখে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এতে ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণও রয়েছে যথেষ্ট। এই উপকরণগুলো দাঁতের গঠনেও রাখে অগ্রণী ভূমিকা। তবে কলার মোচা বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি হয়। কলার মোচার খোসা খেতে হয় না। ভেতরের ফুলগুলো খেতে হয়। যেকোনো প্রকার রক্তশূন্যতার জন্য কলার মোচা ভীষণ জরুরি। এ ছাড়া এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘এ’। রাতকানা রোগ আছে এমন শিশুদের জন্য কলার মোচা খুবই দরকারি। গর্ভস্থ শিশুর প্রায় ৭০ ভাগ মস্তিষ্কের গঠন মায়ের পেটে থাকাকালে হয়ে যায়। তাই যেসব মা কলার মোচা, কাঁচকলার তরকারি নিয়মিত খান, তাঁদের রক্তশূন্যতা সহজে আক্রমণ করে না। হাড়ের জটিল কোনো অপারেশনের পর বা প্লাস্টারের পর এই সবজির আয়রন রক্ত বাড়াতে এবং হাড় দ্রুত শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। মেনোপোজ হওয়া নারীদের হাড় শক্ত হওয়ার জন্যও দরকার এই সবজি। বয়স্ক নারী-পুরুষ ও বাড়ন্ত শিশু, খোলায়াড় বা যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন তাঁদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এই সবজি। তাই টাটকা খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সুত্রঃhttp://medicalinfobd.com/medica_new/index.php?option=com_content&view=article&id=457%3A2014-05-29-12-28-20&catid=134%3Afood-nutrition&Itemid=190

1 comment: