Tuesday, January 3, 2017

ফুটে শীতের ফুল

অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা, চীনা গাঁদা, ইনকা গাঁদা, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজিঅ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা, চীনা গাঁদা, ইনকা গাঁদা, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি
চোখ দুটো বুজে কয়েক সেকেন্ড কল্পনা করুন তো! শীতের ভোরে ফিনফিনে পাতলা ধূসর কুয়াশা নেমেছে আপনার আঙিনায়। প্রাকৃতিক মসলিনের সে নেকাব সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে হলুদ গাঁদার দল, গুটিসুটি মেরে শিশিরে ভিজছে চন্দ্রমল্লিকারা। আর ডালিয়া? ঋজু গ্রীবায় মাথা
দুলিয়ে সগর্বে যেন বলছে সে—ওঠো, জেগে ওঠো সব ফুল। ভোরের সূর্য তোমাদের ডাকছে। সারা গায়ে শিশিরের মুক্তো মেখে তোমরা চমকে দাও এ পৃথিবীর মানুষদের। ক্লান্তি, হতাশা, বেদনা, কষ্ট—মানুষের সব নীল ব্যথা তোমরা ঢেকে দাও আজ তোমাদের রঙে। এই শীতে আপনার বাগানেও ফুটতে পারে ফুল, পেতে পারেন এমনই এক স্বর্গীয় অনুভূতি, শীতের দিনে নিজ হাতে ফুল ফুটিয়ে আপনিও পেতে পারেন সে আনন্দটুকু। এ শীতেই আপনার বারান্দা, করিডোর, আঙিনা, বাগান শিগগির সাজিয়ে ফেলুন বাহারি সব শীতের ফুল দিয়ে। আগারগাঁওয়ে রাস্তার দুপাশে এখন অনেকগুলো নার্সারি গড়ে উঠেছে। সেসব নার্সারিতে শীতের ফুলগাছের কোনো অভাব নেই। পছন্দমতো ফুলগাছ বেছে নিতে পারেন সেখান থেকে। চাইলে ফুল ফোটা গাছসহ টবও কিনে নিতে পারেন। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক শীতের ফুল আছে কী কী?
প্রকৃতির আশীর্বাদে শীতের দিনগুলোতে ফুল ফোটে খুব ভালো। আর শীত দিনের ফুলের সংখ্যাও প্রচুর। চাইলে আপনি ১০০ রকম ফুল দিয়ে আপনার বাগান ভরে দিতে পারেন। যদিও এসব ফুলের প্রায় সবই বিদেশি। তবে এসব বিদেশিনীকে এখন আর পরদেশি ভাবতে ইচ্ছে করে না, ওরা যেন এ বাংলারই ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছে। শুধু সংখ্যায় যে এরা প্রচুর তা নয়, রূপ-বৈচিত্র্যে আর কোনো মৌসুমেই এরা এতটা মুগ্ধ করতে পারে না। সংখ্যা বেশি বলে কোন কোন ফুল এই শীতে চাষ করবেন, তা ভাবতে গেলে সত্যিই ফাঁপরে পড়তে হবে। তবে অতশত ভাবাভাবির দরকার নেই। গাঁদা ফুল দিয়ে শুরু করতে পারেন। বড় বড় ইনকা গাঁদা, ছোট ছোট চায়না গাঁদা, দেশি গাঁদা, রক্ত গাঁদা, হলুদে লাল মিশানো জাম্বো গাঁদা, লম্বা গাছে দেশের জাত রাজ গাঁদা ইত্যাদি নানা জাতের গাঁদা ফুলের চারা এখন পাওয়া যাচ্ছে আশপাশের প্রায় সব নার্সারিতেই। এরপরই বেছে নিতে পারেন চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, অ্যাস্টার, ডেইজি, কসমস, সিলভিয়া, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশান, পপি, সূর্যমুখী, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক, মর্নিং গ্লোরি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস প্রভৃতি। এমনকি গোলাপকেও সঙ্গী করতে পারেন। বারান্দা বা গ্রিলে ঝুলানো টবে লাগানোর জন্য পিটুনিয়া, ন্যাস্টারশিয়াস, অ্যাস্টার, ভারবেনা ইত্যাদি উত্তম। গ্রিলে লতিয়ে দেওয়ার জন্য নীলমণি লতা, মর্নিং গ্লোরি, রেল লতা, সুইট পি ভালো। টবের জন্য নিতে পারেন গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, কারনেশান, ক্যালেন্ডুলা, অ্যাস্টার ইত্যাদি। জমিনের বাগানে সব ফুলই লাগাতে পারেন।
.গাছ তো হলো, এখন ঠিক করে নিন কোথায় সেগুলো কীভাবে লাগাবেন। বাড়ির আঙিনায় ফাঁকা জমি নেই তো কী হয়েছে? মন খারাপ না করে টবেই লাগিয়ে ফেলুন। স্থায়ী বাগান করার চেয়ে টবে লাগানোই যেন বেশি সুবিধে। ইচ্ছেমতো টব সাজিয়ে ঘরদোরের যেকোনো জায়গায় টুকরো টুকরো বাগান করে নেওয়া যায়। আজ যেখানে গাঁদার বাগান দেখছেন, কালই সেখানে দশটা টব সাজিয়ে করে ফেলুন চন্দ্রমল্লিকার বাগান, পরশু করুন ডালিয়ার। এই বৈচিত্র্য কি জমিনে আনতে পারবেন? ছাদ থাকলে সেখানে টবে হরেক রকম গাছ লাগিয়ে খুব সহজে আপনিও আপনার বাড়িতে একটি ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান গড়ে তুলতে পারেন।


শীতে ভালো ফুল ফোটানোর টিপস
* রোদেলা জায়গায় গাছ লাগান।
* গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁজরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ-পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে।
* গাছের চেহারা দুর্বল দেখা গেলে পরপর তিন-চার দিন এক ঝাঁজরি পানির মধ্যে দুই চা চামচ ইউরিয়া সার গুলে ওপরের নিয়মে সেচ দিন।
* সরিষার খইল কয়েক দিন একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখে তা গুলে ১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার চারদিকে দিন। অন্তত কুঁড়ি না আসা পর্যন্ত দিন।
* ফুল ফোটা শুরু হলে তখন থেকে ফুল-পাতা ভিজিয়ে পানি না দেওয়া ভালো।
* গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন।
* স্বাভাবিক সময়ের আগে গাছে কুঁড়ি এলে তা ভেঙে দিন।
* গাছের গোড়া ভেজা থাকলে পানি দেবেন না।
* প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার মাটি হালকা নিড়িয়ে/খুঁচে দিন।
* ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রুত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন।
* প্যানজি গাছের বয়স হলে ফুল ছোট হয়ে আসবে। এ অবস্থায় গোড়া থেকে ছেঁটে দিলে নতুন গজানো ডালে আবার ভালো ফুল ফুটবে।
* অ্যান্টিরিনামের ভালো ফুল পেতে হলে শুধু মাঝের ডালটি রেখে অন্য সব ডাল কচি অবস্থায় ছেঁটে দেবেন।
মৃত্যুঞ্জয় রায় | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ
http://www.prothom-alo.com/life-style/article/1051369/%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%B2

No comments:

Post a Comment