Friday, January 6, 2017

অপচিকিৎসা থেকে সাবধান

অপচিকিৎসা থেকে সাবধান
মুখের দাগের চিকিত্সা করতে এসেছেন একজন রোগী। আমার লেজার সেন্টারে এসে সরাসরি খানিকটা শক্ত ভাষায় বললেন মুখের দাগ যাবে তো ডাক্তার সাহেব। নিজেকে একজন মফস্বলের জনপ্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আরো বললেন, আজকাল যেখানে-সেখানে যেভাবে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে তাতে লেজার সেন্টারেও এখন ট্রিটমেন্ট নিতে ভয় হয়। এতগুলো টাকা দিয়ে যদি কাজ না হয় তাই এই উদ্বেগ। জনপ্রতিনিধির ভাষাটি আমার কাছে ভালো লাগলো না। ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়স হবে জনপ্রতিনিধির। আমি তার রূঢ় বাক্য ও উদ্বেগের কারণ জানতে  চাইলাম। 
 
তিনি বললেন, লম্বা হওয়ার জন্য একজন তথাকথিত হারবাল চিকিত্সকের চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত হয়ে প্রায় মাস ছয়েকের মত চিকিত্সা নিয়েছেন। ব্যয় করেছেন ২০/২৫ হাজার টাকা। কিন্তু ৪ থেকে ৬ ইঞ্চিতো দূরের কথা ১ মিলিমিটারও উচ্চতা বাড়েনি। তাই লম্বা হওয়ার নামে অপচিকিত্সায় প্রতারিত জনপ্রতিনিধির এই ক্ষোভ। তার এই ক্ষোভের যথার্থই কারণ আছে। এবার আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম একজন বয়স্ক পরিণত মানুষের উচ্চতা ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি বাড়ানো যায় এ বিশ্বাস তিনি করলেন কিভাবে। আমি তাকে বললাম আপনার মত একজন শিক্ষিত সচেতন মানুষ যদি প্রতারকের খপ্পরে পড়ে তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হতে পারে। আমি জনপ্রতিনিধিকে বললাম চিকিত্সা বিজ্ঞান বলে একজন মানুষের লম্বা হওয়ার বয়স সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত। এই বয়সের পর আর লম্বা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
 
আজকাল অনেক চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে লম্বা হবার চিকিত্সার নামে প্রতারণা করছে। আর এমনই একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে জনপ্রতিনিধির চিকিত্সার প্রতি নেতিবাচক ধারণা হতেই পারে। তবে লেজার হোক, হারবাল, আয়ুর্বেদিক বা ইউনানী হোক অবশ্যই জেনে শুনে বুঝে চিকিত্সা নেয়া উচিত। লেজার মানেই যে ম্যাজিক তা নয়। 
 
অনেক ক্ষেত্রে লেজার কার্যকর হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেজার মোটেও কার্যকর নয় বা আংশিক কার্যকর। তাই জনপ্রতিনিধির সাথে একমত পোষণ করে বলবো যে কোনো অপ্রচলিত চিকিত্সা যেমন: উচ্চতা বৃদ্ধি, ত্বক ফর্সা করা, যৌবন ফিরিয়ে দেয়া, তারুণ্যদীপ্ত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোথায় চিকিত্সা নিচ্ছেন, কি চিকিত্সা নিচ্ছেন এবং চিকিত্সাটি বিজ্ঞানসম্মত কিনা তা অবশ্যই জেনে নেবেন। কারণ সব জেনে শুনে চিকিত্সা না নিলে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থাকে। এটা সকলেরই বুঝা উচিত।
 
লেখক: চুলপড়া, এলার্জি, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ
ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম০৬ জানুয়ারী, ২০১৭ ইং ১১:১৬ মিঃ

No comments:

Post a Comment