Saturday, January 14, 2017

ঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর কয়েকটি জায়গা

শীতকাল বেড়ানোর জন্য আদর্শ সময়। শীতের এই সময়ে পিকনিক বা ১ দিনের জন্য ঘুরে আসুন ঢাকার আশেপাশের কিছু আকর্ষণীয় স্থান থেকে। ঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর কয়েকটি জায়গার বিবরন ধেখে নিন-

১. কলাকোপা বান্দুরা
বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের বিশাল ভান্ডার কলাকোপা বান্দুরা হতে পারে ডে আউটের জন্য আদর্শ একটি স্থান। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৫ কিমি: দুরের ইছামতি নদী তীরে গড়ে ওঠা প্রায় ২০০ বছরের সমৃদ্ধ এ জনপদটি একোন ভীড় ভাট্টা থেকে দুরে। তাই চলুন যে কোন এক সকালে।
কিভাবে যাবেন : গুলিস্তান মাজারের কাছ থেকে কলাকোপা বান্দুরাগামী বাস ছাড়ে প্রতি ঘন্টায়। এখান থেকে বাসে চেপে ঘন্টা দুয়েক পরে পৌছে যাবেন কলাকোপা বান্দুরা।
কি দেখবেন : ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক সমৃদ্ধ এলাকা এটি। প্রথমেই দেখবেন লক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহ মন্দির। জলদস্যু থেকে দাতায় পরিণত হওয়া খেলারামের কথা আজো ভোলেনি সেখানতার মানুষ।
এরপর একে একে দেখন কোকিলপেয়ারী জমিদারবাড়ি বা জমিদার ব্রজেন সাহার ব্রজ নিকেতন, যা এখন জজবাড়ি নামে খ্যাত; ব্যবসায়ী রাধানাথ সাহার বাড়ি, শ্রীযুক্ত বাবু লোকনাথ সাহার বাড়ি, যার খ্যাতি মঠবাড়ি বা তেলিবাড়ি নামে; মধু বাবুর পাইন্নাবাড়ি, পোদ্দারবাড়ি, কালীবাড়ি এবং কলাকোপার কাছে সামসাবাদ তাঁতপল্লি, এর একটু দূরে আলানপুর তাঁতপল্লি।
আর অতি অবশ্যই ইছমতি নদী ভ্রমণ করবেন।
কলাকোপা বান্দুরা
কলাকোপা বান্দুরা

২. উয়ারী বটেশ্বর, বেলাব, নরসিংদি :
নরসিংদির উয়ারী বটেশ্বর এ বিরাট ধানক্ষেতের পাশে একটি সরকারী গেষ্ট হাউস আছে। এটির বৈশিষ্ট হলো ২ য় তলায় বিশাল রুমটির সামনে বিরাট একটি খোলা ছাদ। অসাধারন একটি জায়গা। এই গেষ্ট হাউজটিতে বুকিং দেয়া একদম সোজা, ভাড়াও কম। বাজার ও রান্নার দায়িত্ব অনায়াসে দেয়া যায় এর কেয়ারটেকারের ওপর।
এক সকালে চলে যান সেখানে। সারাদিন কাটিয়ে বিকেলের দিকে গ্রামটা ঘুরে দেখুন। একফাকে দেখে নিন উয়ারী প্রত্নতাত্বিক স্থানটি। রাতে ফিরে আসুন বাংলোয়। রাতের খাবার খেয়ে রুমের সামনে খোলা জায়গাটিতে বসে যান। রাত কখন শেষ হবে টেরও পাবেন না।
যেভাবে যাবেন : মহাখালি থেকে বিআরটিসির ভৈবগামী বাসে বা চলনবিল/অন্যনা সুপার পরিবহণের বাসে উঠুন। ভৈরবের মরজাল বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান। সময় লাগবে দুই ঘন্টা ভাড়া ১০০ টাকা। সেখান থেকে খনন কার্যের জায়গা যাওয়া যায় সিএনজি করে। প্রতিজন ৩০ টাকা, রিজার্ভ ১২০-১৫০ টাকা। আপডেট – অক্টোবর ১৯, ২০১৩ – খননকার্য অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ এর কাজ চলছে। তাই খনন কার্যের জায়গাগুলো মাটি দিয়ে আবার ঢেকে দেয়া হয়েছে। এভাবে থাকবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ডিসেম্বর এ আবার নতুন করে খনন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। যেসব জিনিস খনন করে তোলা হয়েছে তার বেশিরভাগ আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেটি হলে সব আবার বটেশ্বর এ নিয়ে আসা হবে। (আপাতত প্রত্নতাত্বিক স্থানটি্তে দেখার কিছু নেই)
ডাক বাংলোর ভাড়া ৫০০ টাকা ও ১২০০ টাকা (এসি রুম)। কেয়ারটেকার লিটনের ফোন নম্বর ০১৯৩৩২৫১২৪২
উয়ারী বটেশ্বর
উয়ারী বটেশ্বর
৩. জল জংগলের কাব্য, পুবাইল, গাজিপুর :
টংগীর পুবাইলের প্ক্যইলট বাড়ির কথা হয়তো অনেকে জানেন। প্রাকৃতিক এক ভুমিকে অবিকৃত রেখে আরো প্রাকৃতিক করা হয়েছে ডিজাইনারের নিপুণ ছোয়ায়। এক জোসনা রাতে আগে থেকে থবর দিয়ে চলে যান সেখানে। প্রাকৃতিক গাছপালা আর শান্তু বিলের পারে বসে কাটিয়ে দিন ১ টা দিন।
যেভাবে যাবেন : মহাখালি থেকে নরসিংদি বা কালিগন্জগামী যে কোন বাসে উঠুন। ১ ঘন্টা পর পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় নেমে পড়ুন। ভাড়া নেবে ৪০ টাকা। এরপর একটা ব্যাটারীচালিত রিক্সায় করে পাইলট বাড়ি। গেলে এসে ফোন করুন, গেট খুলে দেবে। তবে অবশ্যই আগে বুকিং থাকতে হবে।
খরচ : এখানে জনপ্রতি নেয়া হয় ২০০০ টাকা নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার সহ। শুধু দুপুর ও রাতে খাবার সহ ১৫০০ টাকা। যোগাযোগ – ০১৯১৯৭৮২২৪৫
জল জঙ্গলের কাব্যর ওই টাকার মধ্যেই খাবার ব্যবস্থা থাকা। খাবার মেনুগুলো দারনু : ভাত, পোলাও, চালতা দিয়ে ডাল, মুরগির মাংশ, রুই মাছ, গুড়া মাছ, তেতুল দিয়ে কচুমুখি, আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা, ঘন ডাল আরো বেশ কটি আইটেম।
৪. বেলাই বিল, গাজীপুর
গাজীপুরের চিলাই নদী এবং সংলগ্ন বেলাই বিল হতে পারে ১ টা দিন কাটাবার আদর্শ জায়গা। বিশাল জলাভুমিতে নৌকায় করে সারাটা দিন পার করুন আর দেখুন জেলেদের মাছ ধরা। সকালে ও এবং বিকেলে তাজা মাছ পাওয়া যায় এখানটায়। আসার সময় কিনে নিয়ে আসুন।
কানাইয়া বাজারের পাশেই চিলাই নদী। এখানে একটা নৌকা ভাড়া করে নিন। ছোট নৌকা হলে সারাদিন নেবে ৫/৬ শ টাকা। আর বড় নৌকা ২০০০ টাকা। রাতে নৌকাতেই থাকতে পারেন। এটা করলে বাজার কমিটিকে জানিয়ে রাখবেন আগেভাগে।
যেভাবে যাবেন : মতিঝিল বা মহাখালি থেকে গাজিপুরগামী বিআরটিসি বা গাজিপুর পরিবহনের বাসে উঠুন। নামবেন গাজীপুর শিববাড়ি মোড় এ। একটু হেটে সামনে গিয়ে কানাইয়া বাজার যাবার টেম্পুতে উঠুন। ৩০ মিনিট পর কানাইয়া বাজারে নামুন। ভাড়া নেবে ১০ টাকা।
 ৫. নাম ধনবাড়ি রয়্যাল রিসোর্ট, টাংগাইল
টাংগাইলের ধনবাড়িতে একটা পুরোনো রাজবাড়ি আছে যা এখন রিসোর্ট হিসেবে চালু হয়েছে। নাম ধনবাড়ি রয়্যাল রিসোর্ট। এখাকার মুল Palace এর ভাড়া বেশী তাই সেখানে না থেকে কাচারী বাড়িটা ভাড়া নিন আর সামনে বিশাল মাঠে বসে ১ টা রাত কাটান উপভোগ করুন।
যেভাবে যাবেন – ঢাকার মহাখালি থেকে সরাসরি ধনবাড়ির বাস ছাড়ে। সময় নেবে ৪ ঘন্টা আর ভাড়া সম্ভবত ২০০ টাকা। রয়্যাল রিসোর্ট এর ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে শুরু। তবে এরা বিভিন্ন ট্রাভেল ফেয়ারে ৫০% ডিসকাউন্ট দেয়। সে সময় বুকিং দিয়ে রাখবেন। ঢাকা অফিস : লাইট হাউস গ্রুপ, বিএসআরএস ভবন, ৭ ম তলা, কারওয়ান বাজার, ঢাকা ফোন- ৯১৩০৯০০, ০১৭২৩-৫৪১৩৪৬ (নামজমুল হাসান)
৬. রিভার প‌্যালেস, ময়মনসিংহ :
ময়মনসিংহ শহর পার হয়ে মুক্তাকাছার দিকে মাইলতিনেক গেলে হাতের ডানে খাগডহরে ব্রম্মপুত্র নদী তীরে গড়ে উঠেছে River Palace নামে আনিন্দ সুন্দর এক রিসোর্ট। এ রিসোর্ট এর বারান্দায় বা পেছনের নদী তীরে বসে একটা রাত কেনো গোটা জীবনটাই পার করে দেয়া যায়।
যেভাবে যাবেন : ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাসে। বাস ষ্ট্যান্ড থেকে কাচিঝুলি পর্যন্ত যাবেন রিক্সায়। এরপর মুক্তাকাছার ম্যাক্সিতে উঠে বসবেন। রিসোর্ট ভাড়া ১০০০, ১৫০০ এবং ২০০০ টাকা।
রিভার প‌্যালেসে খাবার : এখানে খেতে গেলে ওনাদের মেনু থেকে বেছে দিলে সেভাবে রান্না করে দেয়। জনপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা লাগে খেতে।
ঠিকানা : হোটেল River Palace, খাগডহর, ময়মনসিংহ। ফোন : ০১৭১০-৮৫৭০৫৪
৭. ঢাকার আগারগাওয়ে অবস্থিত শেরে বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
একটা বিকেল কাটাবার জন্য আদর্শ জায়গা এটা । চীন মৈত্রির সামনে নেমে রিক্সায় সোজা পশ্চিম দিকে রাস্তা। এখানকার সৌন্কদর্য দেখার য়েকটি স্থান আছে যেমন :
– দক্ষিন দিকের গেট দিয়ে ঢুকে একেবারে উত্তর দিকে যেতে হবে। এরপর একটু পুব দিকে এগোলেই একটা বড় পুকুর। এ পুকুরের জংলা ঘাটটায় বসে পরুন।
– মুল ভবন (সম্ভবত রেজিষ্টার ভবন) এর সামনে ধান ক্ষেতের মাঝে বড় বাধানো চত্বরটায়
– লেডিস হলের কাছে গাছ পালা ঘেরা জায়গাটায়।
এসব জায়গায় এক বক্স ভুনা খিচুরি, এক ফ্লাক্স চা আর কিছু স্নাক্স নিয়ে কয়েকটা ঘন্টা কাটান কোন এক সুন্দর বিকেল কিংবা এক চাদনী রাতে, বাচতে ইচ্ছে করবে আরো হাজার বছর।
৮. রাণীগঞ্জ
রাণীগঞ্জ হতে পারে ডে ট্রিপের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। কাপাসিয়ে ব্রিজ এর ডান পাশ দিয়ে একটি রাস্তা ধরে মাইল দশেক গেলেই রানীগন্জ। জায়গাটি শীতলক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত। এ নদীতে রয়েছে সুন্তর একটি দ্বীপ। তাছাড়া নদীতে নৌকা ভাড়া করে ঘোরা যাঢয়। নদীর ওপারের বাজারে পাওয়া যায় তাজা মাছ যা কোন রেষ্টুরেন্টে দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।
যেভাবে যাবেন : মহাখালি আইসিডিডিআর বি এর াপজিট পেট্রল পাম্প থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় রানীগন্জ এর বাস ছাড়ে। ভাড়া ৮০ টাকার মতো। সময় লাগবে ঘন্টা দুয়েক। কাপাসিয়ার পর রাস্তা গাছ পালায় ছাওয়া অসাধারন এক রাস্তা।

No comments:

Post a Comment